বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে কেবল ডিগ্রি থাকলেই চলবে না, প্রয়োজন বাস্তব অভিজ্ঞতা। আর এই অভিজ্ঞতা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ইন্টার্নশিপ। একটা সময় শুধু ব্যবহারিক বিষয়ে স্নাতক পাস করলে ইন্টার্নশিপের প্রয়োজন ছিল। যেমনঃ মেডিকেল বা আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইন্টার্নশিপ করতে হতো। কিন্তু সময় বদলেছে- এখন যে কোনো বিষয়ে স্নাতক পাস করলেই তাঁকে ইন্টার্নশিপ করতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী বা সদ্য পাশ করা তরুণরা ইন্টার্নশিপ খোঁজার প্রক্রিয়াটিকে কঠিন বলে মনে করেন। কিন্তু কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে এ কাজটি হতে পারে অনেক সহজ।
আজকের ব্লগে আমরা আলোচনা করবো ইন্টার্নশিপ খোঁজার কয়েকটি কার্যকর ও সহজ উপায় নিয়ে। চলুন শুরু করা যাকঃ-
১. নিজের লক্ষ্য ও আগ্রহ পরিষ্কার করাঃ
ইন্টার্নশিপ খোঁজার আগে প্রথমেই বুঝে নিতে হবে আপনি ঠিক কোন ক্ষেত্রে কাজ করতে চান। এক্ষেত্রে আপনার ভালো লাগার বিষয়টা হতে পারে প্রথম অগ্রাধিকার। এছাড়াও, এটি হতে পারে:
- মার্কেটিং
- গ্রাফিক ডিজাইন
- সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট
- কনটেন্ট রাইটিং
- ডেটা অ্যানালাইসিস
- ফাইন্যান্স, ইত্যাদি
নিজের আগ্রহ ও দক্ষতার জায়গা চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ইন্টার্নশিপ খুঁজলেই সফলতার সম্ভাবনা বাড়বে এবং ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে ভালো কিছু করা সম্ভব।
২. সিভি এবং লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট করাঃ
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেকে জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি তৈরির কাজে তেমন গুরুত্ব দেন না। তবে, ইন্টার্নশিপ কিংবা চাকরি পেতে সিভি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্টার্নশিপ খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি পেশাদার সিভি ও একটি LinkedIn প্রোফাইল।
- সিভিতে নিজের স্কিল, একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড, কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ, প্রজেক্ট বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজগুলো উল্লেখ করতে হবে।
- লিংকডইনে প্রোফাইল ছবি, হেডলাইন, Summary, Skills এবং Endorsement ঠিকঠাক রাখা উচিত।
নিজের ইন্টারেস্টের জায়গায় কিছু কাজ বা প্রজেক্ট করে Google Drive বা এ জাতীয় যেকোন সাইটে সেইভ করে রেখে তার লিংক সিভিতে যোগ করা যেতে পারেন, কারণ এটি খুব ভালো প্র্যাকটিস।
৩. নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ও প্ল্যাটফর্মে সার্চঃ
ইন্টার্নশিপের খোঁজখবর বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যায়। বর্তমানে বিভিন্ন জব পোর্টালে ইন্টার্নশিপ ক্যাটাগরি রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ইন্টার্নশিপের সুযোগ সম্পর্কে বলা থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে ইন্টার্নশিপ খোঁজার জন্য অনেক ভালো প্ল্যাটফর্ম রয়েছে ।
বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট:
- Bdjobs.com
- InternBD
আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট:
- Internshala
- Glassdoor
- Indeed
এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলে ফিল্টার ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছামতো ইন্টার্নশিপ সার্চ করা যায়।
৪. সোশ্যাল মিডিয়া ও গ্রুপে অ্যাকটিভ থাকাঃ
বর্তমানে অনেক ইন্টার্নশিপের খবর পাওয়া যায় Facebook Group -এর মাধ্যমে। কিছু জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ:
- Internship Opportunity in Bangladesh
- Career Paths & Jobs
- Marketing/IT/HR Job Circular
- Bdjobs (Official Group)
এসব গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট দেখে এবং নিজেও “Looking for Internship” পোস্ট দিলে অনেক সময় কাজ হয়ে যায়।
৫. ডিরেক্ট কোম্পানিকে ইমেইল করা :
অনেক সময় কোনো প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন নিয়োগের বিজ্ঞাপন না দিলেও তাঁরা আগ্রহী প্রার্থী পেলে সুযোগ দেয়। আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানিতে ইন্টার্ন করতে চান, তাঁদের ক্যারিয়ার পেইজ থেকে ইমেইল খুঁজে নিয়ে নিজের সিভি সহকারে একটি সংক্ষিপ্ত কভার লেটার লিখে পাঠিয়ে দিতে পারেন। তাছাড়া অনেক সময় কিছু ওয়েবসাইট তাঁদের নিজস্ব Career পেজ তৈরি করে রাখেন যেখান থেকে তাঁদের কোম্পানিতে অ্যাভেইলেবল ইন্টার্নশিপ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
৬. ইন্টার্ন থাকা অবস্থায় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টাঃ
সাধারণত ইন্টার্নে সময় থাকে ৩ থেকে ৬ মাস। এই সময়ের মধ্যেই কাজ শেখার চেষ্টা করুন। নিয়োগদাতা কিংবা তত্ত্বাবধায়ককে আপনার আগ্রহের কথা বলুন। এমনভাবে কাজ শেখা ও জানার চেষ্টা করুন যা আপনার ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সহযোগিতা করবে। অনেকেই ইন্টার্নের সময় অফিসের আলোচনা সভা, কর্মশালা, প্রশিক্ষণ পর্ব ইত্যাদি এড়িয়ে যান, এমন করবেন না। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যেভাবে কাজ শেখে, সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ নিন। প্রতিষ্ঠান যেন আপনার প্রয়োজন অনুভব করে, সেভাবে নিজেকে গড়ে তুলুন।
৭. নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবেঃ
ইন্টার্নশিপ খোঁজার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের শিক্ষক, সিনিয়র, বন্ধু, আত্মীয় বা আগের ইন্টার্নদের সঙ্গে কথা বলা, কেননা অনেক সময় তাঁদের রেফারেন্সেই ইন্টার্নশিপ পাওয়া যায়। LinkedIn -এ ইন্ডাস্ট্রির লোকদের সঙ্গে কানেক্ট (Connect) করে আলোচনা করাও কাজে আসে।
শেষ কথা:
প্রথম ইন্টার্নশিপ হতে পারে ভবিষ্যত ক্যারিয়ারের বড় এক মাইলফলক। তাই প্রস্তুত হন, খোঁজ চালিয়ে যান, এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
ইন্টার্নশিপ খোঁজার প্রক্রিয়াটি ধৈর্য ও পরিকল্পনার সাথে করলে নিশ্চিতভাবেই সফলতা আসবে। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট সময় দিয়ে সঠিক জায়গায় খোঁজ রাখলে ভালো সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।